শিশুদের উপর পড়ছে মোবাইল ফোনের ক্ষতিকারক প্রভাব: মাতাপিতাদের জন্য কিছু অত্যাবশ্যক নির্দেশিকা
আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠে গিয়েছে। এই ছোট্ট ডিভাইসগুলি সুবিধা, যোগাযোগ এবং তথ্যের প্রবাহ নিয়ে আমাদের পাশে অবিচ্ছিন্ন হয়েছে। তবে, স্কুলে পড়ুয়া শিশুদের সারাদিন ধরে অধিক সময় মোবাইল ফোনের ব্যবহারের ফলে ঘটতে পারে অত্যন্ত ক্ষতিকারক প্রভাব। আসুন, এই প্রভাবগুলি সম্পর্কে আলোচনা করে আমরা স্কুলে যাওয়া শিশুদের মাতাপিতাদের জন্য কিছু সহজ নির্দেশিকা তৈরি করি।
১. শিশুদের শ্রবণ শক্তির উপর ক্ষতিকারক প্রভাবঃ বাজারের সব মোবাইল ফোনই ব্যাটারি নির্ভর, তাই মোবাইল ফোনের ব্যবহার শিশুদের শ্রবণ শক্তিকে প্রভাবিত করতে পারে। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রকাশিত অধ্যয়ন জানাচ্ছে যে প্রতিদিনের মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে যথেষ্ট সময় মস্তিষ্কের কিছু স্নায়ুর প্রচণ্ড ক্ষয় হয়, যা শিশুদের শ্রবণ শক্তিকে দুর্বল করে। মাতাপিতারা নজর রাখবেন যাতে শিশুদের একটানা ফোন ব্যাবহারের মাঝে নিয়মিত ব্যবহারিক বিশ্রাম অবশ্যই দেওয়া হয় এবং শ্রবণ শক্তির উন্নয়নে উপযুক্ত পুষ্টি সম্পন্ন খাবার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অবশ্যই থাকে।
২. চোখের সমস্যাঃ স্বল্প দীর্ঘের লেখা সম্পন্ন ছোট্ট স্ক্রিনের দিকে দিকে বেশিক্ষণ তাকালে চোখের তন্ত্রিকা জনিত জটিলতা এবং চোখের সমস্যার সম্ভাবনা বাড়ে। মোবাইল ফোনের স্ক্রিন থেকে বিস্ময়কর কম উজ্জ্বল আলো বের হয়, যা শিশুদের চোখের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে তুলতে পারে। এর ফলে শুষ্কতা জনিত চোখের ক্ষতি, ব্যাধি এবং দূরের দৃষ্টি সঙ্ক্রান্ত সমস্যা হতে পারে; এসবের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হচ্ছে প্রবল দূরের দৃষ্টি সঙ্ক্রান্ত সমস্যা । মাতাপিতারা চিন্তিত হলে দরকার অনুযায়ী অপ্টিকাল ক্রিয়ার চশমা ব্যবহারের জন্য ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিতে পারেন।
৩. মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি প্রভাবঃ মোবাইল ফোন ব্যবহার সহজ করে অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ এবং সামাজিক সংযোগ সরবরাহ করে, কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে, শীতলতা ও মানসিক সংঘর্ষ বৃদ্ধি করতে পারে। এছাড়াও, মোবাইল ফোনে সামাজিক মিডিয়ার দায়িত্ব পর্যায়ে এতটা বড় হয় যে এটি শিশুদের স্বপ্ন এবং অভিলাষা শক্তিকে কারণে অকারণে উপহাস করতে পারে। মাতাপিতারা শিশুদের অতিরিক্ত ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা সংজ্ঞায়িত করতে পারেন এবং অফলাইন কার্যক্রমে সম্পূর্ণ মৌখিক এবং মানসিক সংযোগ প্রদানের জন্য কঠোর নির্দেশিকা মানতে শিশুদের বাধ্য করতে পারেন।
৪. পড়াশোনায় ত্রুটি ও লেখাপড়ার সমস্যাঃ মোবাইল ফোনের ব্যবহার পড়াশোনায় মনোযোগ সংক্রান্ত ত্রুটি এবং লেখাপড়ায় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অকারণে পড়াশুনোর চাপ সৃষ্টি করতে গিয়ে দক্ষতার অভাবে শিশুদের লেখাপড়ার প্রতি একাঘ্রতা শক্তি হ্রাস হতে পারে। সাথে সাথে বিশ্বের উদার্থ সম্পদগুলির দরজা খুলে দেয়ার জন্য বিনাকারণে অমূল্য সময়ের অপচয় মোবাইল ফোনের আরেক দিক। এটা সত্য যে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যম মোবাইল। তবে, মাতাপিতারা শিশুদের পঠনপাঠের পদ্ধতির প্রতি নজর রাখুন এবং বইপত্রের ব্যবহার বারানের ব্যাপারে সচেষ্ট হতে পারেন, যা শিশুদের লেখাপড়ার স্বাভাবিক ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে তুলবে।
এছাড়াও দেখা গেছে যে শিক্ষায় মোবাইল ফোনের নেতিবাচক প্রভাবেঃ
- ছাত্র-ছাত্রীরা দৈনন্দিন পড়াশুনোর সময় মাঝে মাঝেই প্রচুর বিচ্ছিন্নতা অনুভব করতে পারে।
- মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে- কলমে লেখালেখি করার অভ্যাস কমে যেতে পারে এবং উচ্চতর শিক্ষার সময় কমে যেতে পারে।
- সব কাজে মোবাইল ফোন ব্যবহার করার কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের মতামত ব্যক্ত করার ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
- মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা সাম্প্রতিক প্রযুক্তি ও সামাজিক সাইটে অনিয়মিত এবং অতিরিক্ত ব্যবহারের অভ্যাসে পড়ে যেতে পারে, যা তাদের সময় ও বিদ্যা সম্পদ অপব্যাবহারের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
- মোবাইল ফোন ব্যবহার করার কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের নিদ্রাহীনতায় ভুগতে হতে পারে, যা তাদের শিক্ষায় অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।
- মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষায় যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কম ধারণা তৈরি হতে পারে এবং তাদের সামাজিক আচারবিচারের মান ন্যূনতমতায় পৌছাতে পারে।
- মোবাইল ফোনের উপর অধিক ভরসার ও ব্যবহারের কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা যে কোন বিষয়ে অপরিপূর্ণ ধারণা নিতে পারে এবং ক্রেতাদের বিজ্ঞাপনের প্রভাবে দক্ষতা অর্জনে পথ হারাতে পারে।
স্কুলে পড়ুয়া শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে জানা পিতামাতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্দেশিকাগুলি মাধ্যমে আমরা মাতাপিতাদের জন্য সঠিক গাইডলাইন সরবরাহ করলাম। আমরা উপযুক্ত সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার প্রভাব নির্দিষ্ট করতে পারি, যাতে শিশুরা উচ্চমানের এবং সম্পূর্ণভাবে উন্নত জীবন উপভোগ করতে পারে।।